সৌন্দর্য তত্ত্ব!The Theory of BEAUTY...

পেছনের মেকাপের ছবিটি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত।পাশের কথা এবং আঁকা আমার।

সৌন্দর্য
কী,কাকে বলে-এসব নিয়ে আলাদা করে ভাবিনি কখনোতবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় অস্বস্তি বিরক্তি টের পেতাম ; বিশেষত অন্যের মুখাবয়ব নিয়ে কতকের আনন্দমুখর,তারস্বর আলোচনায়!!! 

আমি ঠিক ঠাওরে উঠতে পারি না যে , নিয়ে আলোচনার কী আছে ? কারণ,বাহ্যিকভাবে সুন্দর হওয়াও কারো গুণ নয় ,আর সেটির বিপরীত হওয়াও কারো দোষ নয়!কারণ,দুটির কোনোটিই ব্যক্তি নিজে সৃষ্টি  করেনি বা তার অর্জিত নয়।তাই এরকম বিষয় নিয়ে গর্ববোধ করা বা আত্মগ্লানিতে ভোগা সবই অর্থহীন।তবে লুকোবো না,এখনো বাধ্য হয়ে মাঝে-সাঝে এজাতীয় আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে হয় আমাকেও

কারণ চারপাশটা এই আলোচনায় ভরপুর!সাথে ভরপুর কারও অহম্বোধে বা কারও আত্মগ্লানিতে এবং একদলের "গসিপ!" হিসেবে!! 

যাহোক সৌন্দর্যের তো কোনো তত্ত্ব নেই! মানদন্ড কিংবা সংজ্ঞাও! কেও জানেনা সৌন্দর্য আসলে কী, এটি কোথায় থাকে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে বজায় রাখতে হয় এবং চিন্তাভাবনায়ও যে এটি প্রতিফলিত হয় !

কিংবা এটা কি কেবলই মুখমন্ডলে সীমাবদ্ধ? মুখমন্ডলের বর্ণনাতেই বিশেষণ হিসেবে গৃহীত? জানলে,অন্যের মুখ নিয়ে যে ব্যক্তি মুখরা, তার নিজ-আচরণ এত কদর্য কেন! আবার দেখছি- একই বিষয়/জিনিস /চেহারা-কারও কাছে অপূর্ব তো কারও কাছে বিশ্রী,কুৎসিৎ! যাহোক এসব সমীকরণ মিলে না আমার তবে সব মিলিয়ে আপেক্ষিক এই শব্দটি নিয়ে ভীষণ হইচই,মাতামাতি তৈলমর্দন থেকে শুরু করে অহমবোধ! ভালোবাসা থেকে শুরু করে যুদ্ধ! সবশেষে এক বন্ধুর করা প্রশ্নে- তোর কাছে সুন্দরের সংজ্ঞা কী?” ভাবতে বসলাম ব্যাপারটি নিয়ে!

দেখলাম-

 

যা কিছু প্রশান্তি দেয়,সেটাই সৌন্দর্য কিছু জিনিস আমাদের চোখকে শান্তি দেয়,কিছু বিষয় আমাদের মনকে শান্ত করে,আর কিছু আছে,যা আমাদের আত্মাকে তৃপ্ত করে- সবই সৌন্দর্য!

এক্ষেত্রে, যে উদাহরণ টা দেব,সেটা দিতে ভালো না লাগলেও- সবচেয়ে বেশি প্রচলিত বা বহুল ব্যবহৃত বিধায় সেটা সহজবোধ্য হবে

কোনো সুন্দর মানুষকে দেখলে আমাদের চোখে ভালো লাগে,চোখ আরাম পায়,আমরা তখন বলে উঠি "কী সুন্দর!"। আবার একজনকে দেখে হয়তো চোখে ভালো লাগলো না, কিন্তু তার সাথে মেশার পর, তাকে জানা বা বোঝার পর আমরা দেখলাম তার মন যেকোনো বাহ্যিক সৌন্দর্যধারী মানুষকেও হার মানায়! তাহলে তাকেও কি আমরা সুন্দর বলবো না?!

তাছাড়া একই  জিনিস বা বিষয় বা মুখাবয়ব,গান,কবিতা,সঙ্স্কৃতি ইত্যাদি সবই একেক জনের কাছে একেক রকম ঠেকে! একেক জনের চোখে একেক রকম লাগে! এটা তো শাশ্বত!

 

তারপর ধরা যাক, শিল্প। সেটাকেও তো আমরা সুন্দর বলি! কারণ তা আমাদের মধ্যে ভালো লাগার অনুভূতি তৈরি করে কারও কারও সে অনুভূতি তৈরি হয়-এই মাধ্যমে যুক্ত থেকে,কাজ করে, চর্চা করে,আবার কারও কারও শুধুই উপভোগ করে আবার সৌন্দর্যের সাথে শিল্প এত ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িত যে ,আমরা প্রায়শই বলি- সুন্দরের চর্চাই শিল্পবাশিল্প মাত্রই সুন্দর

আর রইলো আত্মিক প্রশান্তি! সেটি  সহজ-ব্যাখ্যাযোগ্য নয়! এটি জীবনব্যাপী একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটুকু বলা যায় যে,আমরা মহাবিশ্বের সাথে যখন সংযুক্ত(connected) হই বা সংযোগ বোধ করি,তখন সবকিছুই অনেক সুন্দর লাগে! সবকিছুই ভালো লাগে, সবই শান্তি দেয়! সেসবও সুন্দর।

 

আর, সবকিছুর উর্ধ্বে যেটি তা হল- সব বিষয়েরই সংজ্ঞা নির্ধারণ করা যায় না বা নির্ধারণ করা ঠিক না যার যেটা ভালো লাগে, যার কাছে যেটাকে সুন্দর লাগে সেটাই সুন্দর সব বিষয়েরই একটা থিওরি বা একটা নির্দিষ্ট পথ বা মত দাঁড় করানো যায় না যে সেটা অনুসরণ করেই আমরা কোনোকিছুকে সেই নির্দিষ্ট বিষয়টি বলে (এক্ষেত্রে “সুন্দর”)  চিহ্নিত করতে পারবো

উদাহরণস্বরূপ, বেশ অনেক বছর আগে, পত্রিকায় একটা আর্টিকেল পড়েছিলাম, বছরই ওটা জানা গিয়েছিল আর পরবর্তীতে আমি ইন্টারনেটেও দেখলাম- সেটা , মুখাবয়বের সৌন্দর্য নির্ধারণের তত্ত্ব! "গোল্ডেন রেশিও" বলে একটা মাপজোখ বের করা গেছে যেটাকে সৌন্দর্যের কারণ বলে উল্লেখ করা হচ্ছে রেশিও বা অনুপাত অনুযায়ী-কার মুখের আয়তনে চোখ দুটোর আয়তন কত ,চোখ দুটো কত কাছাকাছি বা দূরত্বে অবস্থিত, দুই চোখের কতটা মাঝখানে ঠোঁট, নাক ইত্যাদি কি কি যেন! দুঃখিত অনেক আগে পড়েছি, হুবহু মনে নেই এই অনুপাত থাকলেই নাকি কাওকে সুন্দর দেখায়! এখন এই সৌন্দর্য সংজ্ঞার উদাহরণ হিসেবে একজন নারীর ছবি দেয়া হয়েছে, তিনি কোনো একজন অভিনেত্রী বা মডেলবলা হয়েছে,তার চেহারায় এই গোল্ডেন রেশিও পাওয়া গেছে,তাকে পারফেক্ট সুন্দর বলা হচ্ছে আপনারা বিশ্বাস করুন,আমি দুঃখিত এভাবে বলতে হচ্ছে , কিন্তু কোনো কোণ থেকেই তাকে আমার চোখে সুন্দর লাগাতে পারি নি সেই বয়সে! তাহলে ওর মুখে রেশিও থেকে লাভটা কী হল?!


((ইদানীং অর্থাৎ ২০২২ এসে জানতে পারছি গোল্ডেন রেশিও’’ কেবল মুখাবয়বের জন্য নয় বরং বিভিন্ন ক্ষেত্রের সৌন্দর্য  নির্ধারনের মানদন্ড হিসেবে ব্যবহার হয়। অনুপাতটি হল- ১:১.৬১ ! চেহারার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে যার মুখের দৈর্ঘ্য,মুখের প্রস্থের তুলনায় দেড়্গুণ, তাকেই অধিক আকর্ষনীয় দেখায়! এবং যাদের মুখকে উদাহরণ হিসেবে সেখানে উপস্থাপন করা হয়েছে, তাদের চেয়ে ঢের আকর্ষনীয় কিন্তুনির্দিষ্ট অনুপাতবিহীন মানুষ আমি গণনাতীত দেখেছি এবং দেখি!))

তাই যার যা-কিছুই ভালো লাগে, সুন্দর লাগে, সেটাই সুন্দর

২৬/৬/২০

বিকাল ৫.১০

 

বুশরা আহমেদ

ঢাকা-বাংলাদেশ

লেখার ধরণ-মুক্তগদ্য


(আমার এ লেখাটিই সেলিনা হোসেন সম্পাদিত "সংবাদ প্রকাশ" পত্রিকার অনলাইন সঙ্স্করণে "সুন্দর কে,সৌন্দর্য কারে কয়!" নামে প্রকাশিত হয়েছে।সেখানে আমার লেখার কিছুটা ভিন্নতাসহ সম্পাদনার  প্রয়োজন-মতো কিছু পরিবর্তন আছে।নিচে ঐ লেখাটির লিংক দেয়া হল।চাইলে দেখে আসতে পারেন।)

লিংক-সুন্দর কে,সৌন্দর্য কারে কয়!


Comments

Post a Comment

Popular Posts