মনুষ্য চাহিদা!


মানুষের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা! নেতিবাচকটাই বেশি। “কেন সে এত বেশি চায়”!? চাহিদা থাকলেই সে মানুষ খারাপ। ইত্যাদি ইত্যাদি…

 আচ্ছা বিষয়টাকে কী এভাবে ভাবা যায়-

একটা মানুষের জন্মের পর থেকে তার মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতেই হয়।যেটা কিনা একটা জীবন ব্যাপী প্রক্রিয়া। বেঁচে থাকতে হলে প্রতিনিয়ত তার এগুলো লাগবেই।তো সেই প্রয়োজন পূরণের "চাওয়া" তার থাকে।

এরপর আসা যাক অন্য "চাওয়ায়"

মৌলিক চাহিদা পূরণের পর আসে একটু “একটু অধিকতর/তুলনামূলক ভালো”(সহজ ভাষায় better!) থাকার চাওয়া। এইচাওয়া”টা বাড়তে বাড়তে এক সময় বিলাসিতায় গিয়ে পৌঁছাতে পারে

মৌলিক চাহিদা বা তুলনামূলক ভালো কিংবা বিলাসিতার চাওয়াগুলো মানুষের নিজ-কেন্দ্রিক ই ; এবং  "নিজ" পর্যন্তই তা সীমাবদ্ধ থাকলে সে মানুষের জীবন "গতানুগতিক/সরলরৈখিক জীবন "- ভেতরেই পাক খায়। 

 

একবার ভাবুন তো,যদি কোনোচাওয়া” না থাকতো, অর্থাৎ একটা মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ যদি সব হতো এবং শেষ চাহিদা হতো, তাহলে তারপর কী আর মানুষ বেঁচে থাকতো !?

আচ্ছা আপনাদের কি কখনো এ অভিজ্ঞতা হয়েছে যে-

কখনো কখনো সুন্দর বা ভালো কিছুর সান্নিধ্যে এলে "মরে যেতে ইচ্ছে করে" !?

এটা অবশ্য সবার হয় না।

তো আমাদের কেন মরে যেতে ইচ্ছে করে তখন ? নিজেরাও উত্তর খুঁজে পাই না বা বুঝে উঠি না।নিজের কাছেই অবাক লাগে ! কিন্তু মরে যেতে ইচ্ছে করার অনুভূতি টা কিন্তু ভেতরে হতে থাকে এবং এটা সত্য।যারা এর সাথে অপরিচিত তারা বিষয়টাকে উদ্ভট মনে করতে পারেন বা আমাদের নিজেদেরও অবাক লাগে এজন্য যে, মরে যেতে ইচ্ছে করে তো সাধারণত কোনো খারাপ কিছুর প্রেক্ষিতে ! তাহলে ভালো সময়ে এরকম হয় বা হচ্ছে কেন !

 

কারণ টা হল- যখন আমরা সেই অপার্থিব সুন্দর দৃশ্য বা অনুভূতির সান্নিধ্য পাই, তখন নিজেদের জীবনটাকে পরিপূর্ণ মনে হয় ! তখন মনে হয়,জীবনের সব যেন “পাওয়া” হয়ে গেছে ! এখন মরে যেতে বাধা নেই ! নিশ্চিন্তে,সুখে শান্তিতে যেতে পারি !আর কিছু পাওয়ার নেই। দেখার নেই,শোনার নেই ইত্যাদি......

অর্থাৎ নিজের জীবন পূর্ণ অনুভব করার সাথে এই "আর কিছু না চাওয়ার" বিষয়টা জড়িত।

তাহলে এই যে মানুষ যতদিন বেঁচে থাকে, কিছু না কিছু চায়,এর মাধ্যমে আসলে সে বেঁচে থাকে ! বা বেঁচে থাকে বলেই চায়! এতে দোষের কিছু নেই।দোষ হল- নিজের চাওয়া পূরণ করার জন্য কোনো অসৎ পথ অবলম্বন করা,অন্যের ক্ষতি করা,নেতিবাচক ইন্দ্রিয় তৃপ্তি-যেমন হিংসা-দ্বেষ তাড়িত হওয়া

 

নিজের চাওয়া নিজের ভেতর রেখে,নিজের পরিশ্রম দিয়ে সৎ-অর্জনের মধ্যে পাওয়াতেই প্রকৃত তৃপ্তি।

আর Happiness lies in contentment এর ব্যাখ্যা হল- চাহিদা/চাওয়া তো থাকবে, সেটা পূরণের চেষ্টাও থাকবে তবে সেই সৎ-চেষ্টার মধ্যবর্তী সময়টায় তাকে ধীর থাকতে হবে! চাহিদা পূরণে -ধীর হলেই মানুষ তখন অসৎ পথে যায়।আর  ধীর আছে মানেই হল সে satisfied আছে; এ অবস্থায় উন্নতি করার চেষ্টা করছে । উন্নতি করতে পারলে ভালো, না-পারলে আপাতটুকু নিয়েও সে চলতে পারে।এটাই contentment !

আবার এক জাতীয় মানুষ স্বপ্ন দেখে ! অনেক বড় স্বপ্ন! নিজের বাইরে গিয়ে অন্যের নিমিত্তে স্বপ্ন! এটাও পূরণের ব্যাপার! অর্থাৎ এক রকম চাহিদা”! চাহিদায় অবশ্য তখন অন্যের কল্যাণ অন্তর্ভুক্ত। এই মানুষগুলোও কিন্তু স্বপ্ন ছাড়া বাঁচে না।অর্থাৎ চাহিদা ছাড়া বাঁচে না তারা কখনও-সখনও ভাবে-“আত্মকেন্দ্রিক মানুষগুলোর জীবনের অর্থ কী?!শুধু নিজেকে নিয়ে,নিজের জন্য- এটাও কী মানুষের বাঁচা”!!!(ঠিক ভাবে না ভুল ভাবে সেটা কিন্তু ভিন্ন তর্ক!)

যাহোক,নানান রূপে,নানান ভাবে চাহিদা আছে।কখনো সে আছে "স্বপ্ন" নামেও! কেবল কেও ব্যষ্টির দেখে,কেও সমষ্টির দেখে।

চাহিদা আদতে বেঁচে থাকার প্রমাণ! বেঁচে আছে বলেই সে চায় ! মারা গেলেই কেবল এর শেষ হয়।সাধু,সন্ন্যাসীদেরও এটি আছে ! শুধু মোহ টা নেই।অর্থাৎ কোনো কিছু পাওয়ার  craving।তারা সত্যের/ঈশ্বরের /জ্ঞানের সন্ধানে গিয়ে আত্মোপলব্ধি/বুদ্ধ জ্ঞান/আধ্যাত্মিক/সিদ্ধি লাভ করে- যাই বলি না কেন,তা লাভের পর মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত হয়।ওটুকুই তাদের চাহিদা/লক্ষ্য ।.......

আত্মিক মৃত্যু ঘটে গেলে মানুষ জীবিত থেকেও আর কিছু চায় না । সেটার একটা নাম আছে অবশ্য!থাক,তা আর বক্তব্যে তুলে না ধরি.......


৮/৮/২১

সকাল ৬.১৪


(আমার এ লেখাটিই সেলিনা হোসেন সম্পাদিত "সংবাদ প্রকাশ" পত্রিকার অনলাইন সঙ্স্করণে "মানুষের চাহিদার রূপ" নামে প্রকাশিত হয়েছে।সেখানে আমার লেখার কিছুটা ভিন্নতাসহ সম্পাদনার  প্রয়োজন-মতো কিছু পরিবর্তন আছে।নিচে ঐ লেখাটির লিংক দেয়া হল।চাইলে দেখে আসতে পারেন।)


লিংক>>>>> মানুষের চাহিদার রূপ

 

 





Comments

  1. apnio onk sundor mashallahh.. apnr likha o onk .. sundor .. asha Kori very soon ... u will get .. golden play button

    ReplyDelete
  2. আল্লাহ সৃষ্টিতত্ত্বের শুরু থেকে এই চাওয়া এবং সৃষ্টিতত্ত্বের বিনাশ ও একটা চাওয়া এটা লেখনি ও বিষয় না এটা অনুধাবনের বিষয় এবং বুঝার বিষয়

    ReplyDelete
    Replies
    1. অনুগ্রহ করে বুঝিয়ে বলবেন আবার

      Delete

Post a Comment

Popular Posts